১২২ পাতায় আগুন ঝরা নয় টি গল্প আর একটি একাঙ্ক নাটক, সম্পাদক সাজ্জাদ জহীরের ‘ঘুম আসে না’, ‘জান্নাতের প্রসন্নতা’, ‘গ্রীষ্ম কালের এক রাত্রি’, ‘দুলারি’, ‘আবার সেই গোলমাল’; আহমেদ আলির ‘মেঘ ওঠে না’, ‘শীতকালীন বৃষ্টির একটি রাত’; রশিদ জাঁহার ‘দিল্লি ভ্রমণ’ ‘পর্দার পেছনে’ (নাটক); ও মাহমুদ-উজ-জাফরের ‘পৌরুষ’ এখানে সংকলিত।কিছু উক্তির উপস্থাপন গল্পগুলি থেকে।
সাজ্জাদ জহীর
‘আকবর সাহেব, মাশা-আল্লাহ্!আপনি তো যথার্থ শায়ের!কতগুলি জাতীয়তাবাদী কবিতা রচনা করেছেন? প্রেমিক-প্রেমিকার গোলাপ বাগান এবং বুলবুলের গপপো আর কতদিন চলবে?’
‘ইজ্জত নিয়ে কি চাটবে নাকি? রুটি আর নুন খেয়ে খেয়ে তো শরীর দুমড়ে-মুচড়ে বেঁকে গেছে। দারিদ্র্য থাকলে তো আর বলার কিছু নেই, বরং আরও ভাল হল। তারপর কেবল বাকি রইল কেবল ইজ্জত! আর ইজ্জতের উপর খোদাবন্দ-পাক!’
আকবর সাহেব…আপনার শরীরের চামড়া কোথায় গেল? জি, আমি না খেয়ে মরছি। আমার শরীরের মাংস আমি শকুনদের খাইয়ে দিয়েছি। আর চামড়া দিয়ে তবলা বানিয়ে মুন্নিজানকে উপহার দিয়েছি…আমার কাছে মৃত্যু যেমন অপছন্দের, তেমনি অপছন্দের হল স্বাধীনতা। কেউ আমার পেট ভরিয়ে দিক!…হ্যাত্ তেরি মচ্ছর কি… (‘ঘুম আসে না’)
‘ওদের [মৌলভিদের] লম্বা কুর্তা আর ক’বা, অদের জুতো আর চপ্পল, ওদের দুই ভাঁজের টুপি, গোল ন্যাড়া মাথা আর পবিত্র দাড়ি নিয়ে এমনই ভাব করে থাকে, যেন সুন্দরী হুরিরা তাদের দাড়ির প্রতিটি চুল ওদের চোখের পাতা দিয়ে মুছে দিবে!’
‘স্ত্রী বিয়োগের দু বছর পর, ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে মৌলানা সাহেব দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু এই নতুন জীবনের বিস্তারে মৌলানার প্রাণ দুঃসহ হয়ে উঠেছিল।মৌলানা দাউদ আর স্ত্রীর মধ্যে বয়সের তফাৎ ছিল বিশ বছর। যদিও মৌলানা তাঁর স্ত্রীকে এই বলে আশ্বাস দিতেন দাড়ির কয়েকগাছি চুল শ্লেষ্মার কারণে সাদা হয়ে গেছে মাত্র। কিন্তু ওঁর যুবতি স্ত্রী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ওঁর বিগতযৌবনের প্রমাণ স্বরূপ দ্বিতীয় নিদর্শন পেশ করত। ফলে মৌলানা সাহেবকে চুপ করে যেতে হত।’
‘…রাত্রির অন্ধকার রহস্যময়তার মধ্যে তারাদের ঝকঝকে আলো [গ্রীষ্মকালের] শীতল হাওয়া তাঁর যুবতি শরীরে যাদুক্রিয়া শুরু করেছিল। সে হঠাৎ মৌলানার হাত ধরে নিজের দিকে টানল, দুই বাহু দিয়ে মৌলানার গলা জড়িয়ে নিজের গাল ওঁর মুখের কাছে রেখে গভীর শ্বাস নিতে নিতে বলল। ‘এসো, শুয়ে পড়ো!’…বিবি হাওয়া, আদমের প্রথম গুনাহ্, জুলেখার প্রেমাসক্তি…নারীদের পাপের সম্পূর্ণ তালিকা তাঁর মনে পরে গেল। তিনি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনলেন।… ‘দেশলাই কোথায় আছে?’…মৌলানার স্ত্রী উঠে বসল আর বিষভরা কণ্ঠে বলল, ‘ বুড়ো মুখপোড়া!আট ছেলেমেয়ের বাপ। বড়ো নামাজি হয়েছে! রাতের ঘুম হারাম করে দিল! দেশলাই…দেশলাই?’
‘ও আমার বান্দা! আমি তোর ভক্তিতে প্রসন্ন হয়েছি। তুই সারাজীবন এমনভাবে আমার আনুগত্য করেছিস যে নিজের বোধবুদ্ধি আর কল্পনাশক্তিকে একটুও নাড়াচাড়া করতে দিসনি। অবিশ্বাসের মূলে রয়েছে এই দুই শয়তানি শক্তি। মানুষের বোধবুদ্ধি যে ইমান ও ধর্মের দুশমন এই কথাটা তুই ভালো রকম বুঝেছিস।…এ জন্য তোর পুরষ্কার হল জান্নাতে বসবাস।’
‘কারও কুঞ্চিত ঘন কেশদাম…কারও গোলাপি গাল। কারও উননাবি ঠোঁট, তো কারও মসৃণ পদযুগল। কারও মিহি আঙুল তো কারও মদালস চোখ।কারও সূচ্যাগ্র স্তন, তো কারও পলকা কোমর আর কারও-বা নরম পেট।…একলাফে তার কক্ষে হাজির হলেন আর তাঁকে সজোরে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু যেই ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যাবেন অমনি পেছন থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল।… তখন সূর্য উঠে গেছে…ওঁর বিবি পাশে দাঁড়িয়ে হাসছিল। (জান্নাতের প্রসন্নতা)
“সত্যি বলতে কী, এসব লক্ষ্মণই বলছে যে কিয়ামত ঘনিয়ে আসছে। সারা দুনিয়ার অত্যাচারী মানুষেরা তো সুখে শান্তিতে মজা লুটে নিচ্ছে, আর যে বেচারা আল্লার নেক বান্দা—তাকে সবরকম বিপদ আর কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।”
“ই, অদ্ভুত তো! অদ্ভুত তুমি জুম্মন মিয়াঁ! তুমি নিজেকে মুসলমান বলে গর্ব করো আর এটুকু জানো না যে বনি ইসরায়েল কোন পাখির নাম? আরে মিয়াঁ সমস্ত কালামপাক তো বনি ইসরায়েলের চর্চায় ভর্তি। হজরত মুসা কলিমুল্লার নাম কি তুমি শুনেছ?”
“কখনও শুনেছ কি নূরজাহাঁর নাম? আ হা হা হা, কী গায়, কী বয়ান করে, কী নাচ যে নাচে!…কোমরের দুলুনি…ওর পায়ের ঘুঙুরের ঝংকার!…খোলা উঠোনে তারার ছায়ায় মেহফিল হবে। ভৈরবী শুনিয়ে জলসা শেষ হবে।…মিনশিজি প্রায় লাফিয়ে মোটরগাড়িতে উঠে বসলেন।জুম্মনের কথা তার মনেই পড়ল না।” (গ্রীষ্ম কালের এক রাত্রি)
“কাজেম দুলারিকে দু’চোখ ভরে দেখতে লাগল! দুলারির সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগল! তার দু’চোখে অশ্রু ভরে এল। সে একটা বোতল হাতে তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কাজেম এগিয়ে গিয়ে অর হাত থেকে বোতল নিয়ে আলাদা রেখে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল।মেয়েটি চোখ বন্ধ করল আর অর তনু-মন তার কোলে সমর্পণ করল।”
“কাজেমের বিয়ে স্থির হয়েছে।…বাড়িতে অতিথি অভ্যাগতদের ভিড় রয়েছে। এক উৎসবের উদ্যোগ, কর্মকাণ্ডের ব্যস্ততা রয়েছে।এমনই এক রাত্রে দুলারি উধাও হয়ে গেল।…তিন চার মাস পর শেখ নাজিম আলি সাহেবের এক বৃদ্ধ চাকর দুলারিকে শহরের গরিব বেশ্যাদের মহল্লায় দেখতে পেল।” (দুলারি)
“কী বললেন? অন্তর্গত অবস্থা?”
“এটা কোন হাস্যকর কথা নয়, ধর্ম এক স্বর্গীয় প্রভা—যার দীপ্তিতে আমরা সৃষ্টির উজ্জবল আড়ম্বর গুলি প্রত্যক্ষ করি। এতি এক অন্তর্গত…”
“খোদার ওয়াস্তে আপনি অন্য কিছু কথা বলুন। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি আমার অন্তর্গত অবস্থা আন্দাজ করতে পারছেন না। আমার পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। এসময় আমার স্বর্গীয় প্রভার প্রয়োজন একেবারে নেই।” (আবার সেই কোলাহল)
আহমেদ আলি
“সমুদ্র কী শুকিয়ে গেছে যে আকাশে মেঘ ওঠে না? শুকিয়ে গেছে! সমুদ্রও শেষ অবধি শুকিয়ে গেছে! সমুদ্র! সাত সমুদ্র পার থেকে এসেছে। আর আমরাও ডুবে মরেছি। গুডুপ, গুডুপ, গুডুপ—ডুবে যাচ্ছি। জলের ভিতর গোত্তা মারছি। নিজেদের বৃত্তেই স্নান সেরে নিচ্ছি। রোদ এত তীব্র, তবু বাষ্প তৈরি হচ্ছে না! কেনই বা বাষ্প সৃষ্টি হবে? রক্ত তো শুকিয়ে গেছে! জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছে!কিন্তু সত্যিই কি মেঘ তৈরি হয় বাষ্প থেকে? আমরা তো শুনতাম, মেঘ হয় স্পঞ্জের মতো, হাওয়ায় ভেসে ভেসে বেড়ায়। আর গরম যখন খুব বেড়ে যায়, তেষ্টাই সমুদ্রের তীর আরও নেমে যায়।… আর তোপের ভয়ে মুততে শুরু করে দেয়। চিরিক চিরিক মুততে থাকে। যা কিছু ইস্কুলে পড়ানো হয় সব মিথ্যে।”
“আমি হলাম সেই মানুশ—যার নিজের রুপের অনুভব নেই! কুচকুচে কালো, নোংরা, ল্যাঙট-পরা আধা উলঙ্গ!ভাই বন্ধুদের কেউ কোনও কথায় উসকে দিল তো ঝগড়া মারামারি লাগিয়ে দিল। আর অন্যরা যে গলা কেটে ফেলে, তাতে কিছু যায় আসে না। জুতো খায়, লাথি সহ্য করে, গালাগালি শনে।”
“হাতি শিকারে গিয়ে মশা মেরেছে আমাদের নেতা।… ‘রাজামারি পোদনি হম ব্যয়র বসাউন জায়েঁ।’ আমাদের সেনাপতি এক্ষুনি একটা মশা মেরেছে। আর আমরা তার পেছনে পেছনে হাতি শিকার করতে চলেছি ” (মেঘ ওঠে না)
“এমন হলে কোথায় যাব? কী করব? এর থেকে বরং মৃত্যু হোক আমাদের!…ইয়া আল্লাহ!এমন অবস্থা যে এক্তু শোয়াবসার জায়গাও নেই। ছাদ তো নয় যেন চালুনির মতো টপ টপ করে ঝরছে।…আমার তো যাহোক, বাচ্চাকাচ্চা মুখপোড়াদের নিয়ে হয়েছে যত বিপদ। …উফ কী ঠাণ্ডা পড়ছে! হাড়মাস কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এদিকে তো আমাদের একটিমাত্র লেপ! আর মানুষ চারজন!…এমন একদিন ছিল যখন আমাদের নিজেদের মহল ছিল, চাকর বাকর ছিল, মেঝেতে কার্পেট পাতা আর তার উপর পালঙ্ক ছিল!… আহা্! কী সুন্দর রেশমি চুনেটের কাজ করা আর সোনালি বর্ডার দেওয়া লেপ!”
“খোদা! স্রেফ এক ধোঁকার আড়াল মাত্র। আর ধর্ম তো আমাদের এসবই শেখায়, এসবই পড়িয়ে থাকে! তারপরও বলে যে ধর্ম হল জ্ঞানের ভান্ডার! আর আছে দারিদ্র্যের বাহানা। আসলে এসব হল মূর্খ, বোকাদের বোধবুদ্ধি।ওই বোধবুদ্ধি দিয়েই ওরা অন্যদের—যারা এগিয়ে যেতে চায়, তাদের পেছন থেকে টেনে ধরে। ধর্ম হল উন্নতি বা প্রগতির পথে এক মস্ত বাধা। গরিব হয়ে থাকো। গরিবির দ্বারাই খোদাকে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা তো পেলাম না।”
“—আম্মা খিদে পেয়েছে। দেখ না পেট কেমন খালি হয়ে গেছে।…হায়! আমি যদি ওদের জন্মদাত্রী মা না হতাম! আমি আমার জীবন তো যেভাবেই হোক কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু ওদের কষ্ট যে চোখে দেখে থাকা যায় না। একটি শুকনো রুটি পাওয়া গেল এক হাঁড়ির ভেতর থেকে। সেটা টুকরো টুকরো করে জলে ভিজিয়ে বাচ্চাটির সামনে রেখে দিল। পেট বড় বালাই! বেচারা বাচ্চাটি কুকুরের মতো তাতে লেগে গেল।”
“—আরে, লা দো কোঈ জঞ্জল মুঝে… জঞ্জল…মুঝে…বাজা…বা…বাজার…মউদ-উঝ…
রাত।” (শীতকালীন বৃষ্টির একটি রাত)
রশিদ জাহাঁ
“একে তো বিরক্তকর বোরকা আর দ্বিতীয় হল পুরুষমানুষেরা! পুরুষমানুষেরা এমনিতেই বদস্বভাবের হয়ে থাকে। তার উপর যদি কোন স্ত্রীলোককে এভাবে বসে থাকতে দেখে তো তখন ওখানেই ঘুরঘুর করতে থাকে। একটা পান খাওয়ারও জো নেই। কোনও হতভাগা খুকখুক করে কাশতে থাকে, তো কেউ আবার গলাখাকারি দেয়। ভয়ে তো আমার দম বেরিয়ে আসার জোগাড়।”
“আর কি বলব বুয়া, সাহেব আর মেমসাহেবরা দিল্লি ইস্টিশানে এতবেশি থাকে যে গুনে শেষ করা যায় না। হাতে হাত রেখে গিটপিট করতে করতে চলে যায়। আমাদের হিন্দুস্থানি লোকজন সব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। হতভাগাদের চোখ কানা হয় না কেন?”
“আর হ্যাঁ বুয়া!দোকানদাররা আমাদের এখানকার মতো নয়।পরিষ্কার পরিছন্ন খাকি জামাকাপড় পরে থাকে।…কাঠের ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে বেড়ায়—পান বিড়ি সিগারেট দহিবড়া আর নানারকম খেলনাপাতি আর মিষ্টান্ন।…একটি গাড়ি এসে থামল আমার পাশেই। এমন শোরগোল হল যে মনে হল কানের পর্দা ফেটে যাবে! এদিকে কুলিদের হাঁকডাক আর ওদিকে হকার দোকানদাররা কানের পোকা মারছিল। আর যাত্রীরা তো একে অন্যের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল!আর এর মাঝে আমি অসহায়ের মতো আসবাবপত্রের উপর বসেছিলাম।… প্রায় দু’ঘণ্টা পর গোঁফে তা দিতে দিতে তাঁকে আসতে দেখা গেল।… ‘আমি বল্লাম—খোদার ওয়াস্তে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও।দরকার নেই আমার এই পোড়ারমুখো দিল্লি ভ্রমণের!তোমার সঙ্গে আর কোনও জান্নাতে যেতে হলেও যাব না।” ( দিল্লি ভ্রমণ )
“কিন্তু বুয়া, ছ’মাস সে বাড়ি এল না। সবসময় চাওড়িতে পড়ে থাকতেন। …আর এখন আবার সেই একই ঘ্যানঘ্যান প্রতিদিন শুরু হয়েছে—তুমি তো রোজকার রুগি হয়ে গেছো, আমি আর কতদিন অপেক্ষা করব? আমি দ্বিতীয় বিয়ে করছি। এছাড়াও সে দাবি করত—তোমাকেই আমার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।শরিয়তে চারটি স্ত্রী বৈধ করা হয়েছে, তাহলে আমি করব না কেন? তো, আমি বল্লাম—ব্যস তাহলে আর কী, বিসমিল্লা করো। আর মাত্র একবছর পর তো সাবিরার বিয়ে দিতে হবে। বাবা আর মেয়ের বিয়ে একই লগ্নে হয়ে যাক! তারপর এক কোলে থাকবে নাতি বা নাতনি আর অন্য কোলে নতুন বউয়ের বাচ্চা!”
“আসল কথা হচ্ছে গর্ভাশয় আর নিম্নাঙ্গের সবকিছু অনেক ঝুলে পড়েছিল। তো, সেসব ঠিক করানো হয়েছিল যাতে মিয়াঁ আবার আমার শরীরে নতুন বউয়ের স্বাদ পায়। হ্যাঁ বুয়া, যে মেয়ের প্রতিবছর বাচ্চা হয়, তার শরীর কতদিন আর ঠিক থাকতে পারে? আবার ঝুলে পড়ল। আর আমার পেছনে লেগে পড়লেন তিনি। ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে আমাকে জবাই করাল, তবুও সে খুশি নয়। [পাশের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে এল।] ” (পর্দার পেছনে)
মাহমুদ-উজ জাফর
“অই আমার বিবি যাচ্ছে। কিন্তু ওর ঠোঁটে লেগে থাকা সেরকম কোনও হাসি নেই।…ওই তো এক হাড়ের কাঠামো মাত্র! ওর ভয়ানক চেহারা দেখে এটাই মনে হয় যে সে এক মারাত্বক রোগের শিকার হয়ে পড়েছে এবং মৃত্যুভয়ে ভীত।”
“কিন্তু আমার পক্ষে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।…কেউ আমাকে উপদেশ দিত তো কেউ নিন্দামন্দ করত।…সবকিছু মিলে আমার জীবন এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার শ্বশুর শাশুড়ির আমার এই মুক্ত জীবন বড়োই পীড়াদায়ক ছিল।তাঁরা ভয় করতেন যদি আমি তাঁদের মেয়েকে একেবারে ত্যাগ করি! এদিকে আমার মা সকাল-সন্ধ্যা আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য বলতেন।”
“কিন্তু মায়ের প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হলাম না। শেষপর্যন্ত লোকজন আমার পৌরুষ নিয়ে সন্দেহ করতে লাগলো।এবং নানা ধরনের কানাকানি, টিপ্পনি করতে লাগল। এসব দেখে আমি আর থাকতে পারলাম না।…আমরা দু’জন এক দীর্ঘ সফর করলাম। সামান্য কয়েকদিন পর যখন আমার স্ত্রীর শরির-সাস্থ্য ঠিক হয়ে গেল … এভাবে একটির পর একটি মাস কেটে যেতে থাকল আর আমার স্ত্রীর পেট উঁচু হতে থাকল।”
“তার শরীর কষ্টের প্রাবল্যে লাফিয়ে উঠছিল।কোনওক্রমেই সে স্থির থাকতে পারছিল না।…কিন্তু ওর মৃত্যুর পর লোকজন যখন আমাকে একথা বলতে এল যে মৃত্যুর সময় তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ছিল, তখন আমার মন কিছুটা শান্তি পেল।” (পৌরুষ)